শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

‘আমি নিজ বিভাগে শিক্ষকের দ্বারা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার’

‘আমি নিজ বিভাগে শিক্ষকের দ্বারা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার’

স্বদেশ ডেস্ক

নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) শরণাপন্ন হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের ১১তম ব্যাচের ছাত্রী কাজী ফারজানা মিম।

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিম। এ সময় তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন হারুন।

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাজী ফারজানা মিম বলেন, ‘আমি নিজ বিভাগে এক শিক্ষকের দ্বারা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছিলাম এবং ক্লাস রুমে বুলিংয়ের শিকার হয়েছিলাম। আমি বিষয়টি নিয়ে তখন উপাচার্য বরাবর অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো বিচার পাইনি। সেজন্য আমি বিভিন্ন জয়াগায় সাহায্য প্রার্থনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘হারুন স্যার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ওনারা আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন। আমি তাদের ওপর ভরসা রাখছি। আমি আবারও আপনাদের মাধ্যমে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, যেন আমার এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হয়।’

ফারজানা মিম বলেন, ‘জবি ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন ও একই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিমের দ্বারা আমি নির্যাতিত এবং নিপীড়িত। আমার একাডেমিক জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছি। আপনারা জানেন আমাকে বিভিন্ন কোর্সে ০০ দিয়ে ফেল করানো হয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের স্টুডেন্ট হিসেবে আমার মেধা কতটুকু সেই প্রশ্ন আমি জাতির কাছে রাখলাম। সেটা আপনার বিবেচনা করবেন।’

কত দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন—সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে জবির এই ছাত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে আমি অভিযোগ দিই। এরপর আমি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি প্রতিবাদ ও জানাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি এখন পর্যন্ত আমাকে কোনো অফিসিয়ালি কোনো রিপোর্ট দেয়নি। কিন্তু ঘটনাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত চলে গিয়েছে। অভিযুক্ত নিজেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে রিট করে হেরে যান। আমি সুপ্রিম কোর্ট থেকে জয়লাভ করি। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তের কোনো বিচার করেনি। এ বিষয়টি নিয়ে আমি সন্দিহান। আমি সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমি অংকনের বিচার চাই, আমি অবন্তিকারও বিচার চাই। আমি চাই যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা এখনো প্রকাশ্য আনেননি তারা যেন সামনে আসেন এবং পাশে দাঁড়ান।’

ফারজানা মিম বলেন, ‘যারা এই অন্যায় আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন করে আসছে বা যারা ফাইরুজ অবন্তিকা ও অংকনের মতো যারা জীবন হারাল, আমার বোনেরা যারা জীবন দিয়েছে বা যে বোনেরা এখনো বলতে পারছেন না তাদের যেন সঠিক দৃষ্টান্ত আমি হতে পারি। কারণ আমি চাই আমার বিচারটা যদি সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত হয়, তাহলে আমি যেন বিচার বয়ে এনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেখাতে পারি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন যেন আমার পাশে থাকে। আমাকে যেন অতিসত্বর সব সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এটাই আমার একমাত্র দাবি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কালক্ষেপণ করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি এটা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন এটাকে কালক্ষেপণ করছে। যেটা নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে একটা রিপোর্ট করতে হয়, কিন্তু কতো সময় হয়ে গেল এখনো কোনো বিচার পেলাম না।’

নিজের নিরাত্তা নিয়ে এই ছাত্রী বলেন, ‘আমাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমার হাত-পা কেটে ফেলা হবে। যেটা অতীতেও হয়েছে আমাকে রুম বন্দী করা হয়েছে। আমার পরিবারের ওপর প্রেসার দেওয়া হয়েছে। আমার ছাত্রজীবন তো ধ্বংস অলরেডি করে দিয়েছে সেটা আপনারা জানেন। আমার ব্যক্তিজীবনও হুমকির মুখে, স্বাধীনতার সঙ্গে আমি কোথাও চলাচল করতে পারছি না।’

হুমকি কী অভিযুক্ত শিক্ষকেরাই দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মিম বলেন, ‘শিক্ষকরাই আমাকে হুমকি দিয়েছেন বা তাদের বিভিন্ন মারফতে দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেছে, মামলা প্রত্যাহার না করা হলে আমাকে মেরে ফেলা হবে। এছাড়া মামলা প্রত্যাহার না করলে বহিষ্কার করা হবে। আমি একজন ছাত্র হিসেবে, আমার ছাত্রত্ব বহিষ্কার করা হবে, এই যে একটা অপবাদ ও কলঙ্ক এটা নিয়ে বেঁচে থাকা আর না বেঁচে থাকা সমান।’

অভিযোগের বিষয়ে মিম বলেন, ‘আমার প্রথম অভিযোগ ক্লাসরুমে বুলিং এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে ছিল। এই অভিযোগ দেওয়ার পরপরই অভিযুক্তের সহযোগী হয়ে চেয়ারম্যান স্যার আমাকে পরীক্ষায় ০০ দিয়ে ফেল করিয়েছেন এবং করেই চলেছেন। আমার জানা মতে আরও অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন এবং আমার বিভাগেও আছেন।’

অবন্তিকার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরই কেন এলেন, এর মাঝে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে—এমন প্রশ্ন করা হলে জবি ছাত্রী মিম বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমি নিজ থেকে কোনো প্রেস বিফ্রিং করিনি বা ফেসবুকে গিয়ে কোনো কিছু লিখিনি। অবন্তিকার মৃত্যুর পর যখন আমি প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করি আমার বিষয় ছিল, আমি তো বিচার পেলাম না, যেহেতু একটা লম্বা সময় হয়ে গেছে এজন্য আমি চেয়েছি আমার এই ছোট বোন বিচার পাক। সেখানে গিয়ে নিজের হয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি অবন্তিকার হয়ে কথা বলেছি। আপনারা সেটা দেখেছেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877